‘তরুণের আহ্বান’ ক্লাবের পুজো রামপুরহাট শহর তথা বীরভূম জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পুজোগুলির মধ্যে একটি। ৬৫তম বর্ষে পদার্পণ করল এই পুজো। এই পুজোর শুরুটা হয়েছিল অন্যরকমভাবে। ১৯৫৭ সাল নাগাদ রামপুরহাট পুর-এলাকায় গুটিকয়েক পুজো হতো, কিছু বাড়ির পুজো আর হাতে গোনা দু-একটি ক্লাবের পুজো। সেসময়ে রামপুরহাট পৌরসভার কয়েকজন ঝাড়ুদার নিজেদের উদ্যোগে এই পুজো শুরু করেন। যতটুকু জানা যায়, হয়তো অন্য পুজোয় তারা গুরুত্বহীন ছিলেন অথবা ব্রাত্য ছিলেন বলেই তারা এই উদ্যোগ নেন। টানা তিন বছর তারাই সামলেছিলেন এই পুজোর দায়িত্ব, কিন্তু তারপর তাদের পক্ষে চাঁদা তুলে এই পুজো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেন, পুজো বন্ধ রাখবেন। সেসময়ে পাড়ার কিছু উদ্যোগী ছেলে নিজেদের কাঁধে এই পুজোর দায়িত্ব তুলে নেন। এরপর ধীরে ধীরে পথ চলা শুরু হয় ‘তরুণের আহ্বান’ ক্লাবের। তখন পাড়ার ছেলেরা কলের পাইপ, শাড়ি, ধুতি দিয়ে নিজেরাই মণ্ডপ তৈরি করতেন। সেসময়ে পুজোর সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায় স্থানীয় বিদ্যালয়ের মাস্টারমশাই শ্রী বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় মহাশয়কে, যুক্ত হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামতা প্রসাদ, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মনোরঞ্জন সাহা, পিনাকীরঞ্জন সাহা প্রমুখ। এভাবেই ধীরে ধীরে পথ চলতে চলতে ক্লাবের নিজস্ব জমিতে মন্দির গড়ে তোলা হয় নব্বইয়ের দশকে। এখন বর্তমান প্রজন্ম পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন। ‘তরুণের আহ্বান’ ক্লাবের মা দুর্গা খুবই জাগ্রত, এটাই স্থানীয় মানুষদের বিশ্বাস। ভক্তরা নিজেদের মনস্কামনা পূর্ণ হলে, মায়ের মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে যান। এলাকাবাসী, পার্শ্ববর্তী গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ড বিহার থেকেও অনেক ভক্ত আসেন পুজো দিতে। তৃতীয়ার দিন উদ্বোধনের পর থেকেই মণ্ডপে দর্শনার্থীদের ঢল নামে। এই পুজোর একটি অভিনব বৈশিষ্ট্য — প্রতিদিন ভোগ নিবেদন করার পর মা’কে পান সেজে দেওয়া হয়। পুজোয় মাসকলাই বলির প্রথা রয়েছে এবং অষ্টমীর পুজোয় কোনওরকম ঢাক-ঢোল, ঘণ্টা বাজানোর নিয়ম নেই। বর্তমান প্রজন্মের হাত ধরে পুজোয় এখন থিমের ছোঁয়া লেগেছে। তবে মাতৃমূর্তি বরাবরের মত সাবেকি ভুবনমোহিনী মূর্তি। বিগত বেশ কয়েকবছর ধরে এই পুজো জেলার সেরার সেরা পুজোর সম্মানে সম্মানিত হচ্ছে।