Digital Durga
Digital Durga

সংরক্ষণ

বটকৃষ্ট পাল শিবপুর পালবাড়ি হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ

পুজোর ইতিহাস

শিবপুরের পালবাড়ির ‘অভয়া দুর্গাপুজো’ হাওড়া অঞ্চলের বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম, যা শুরু করেছিলেন এই বাড়ির পূর্বপুরুষ সর্বস্য পাল। কবে এই পুজো শুরু হয়েছিল সে সম্বন্ধে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। তবে অনুমান করা যায়, তা প্রাচীন। সর্বস্য পাল লোকান্তরিত হওয়ার পর এই পুজোর দায়িত্ব নেন জগৎবিখ্যাত ঔষধ প্রস্তুতকারক এবং বিক্রেতা বটকৃষ্ণ পাল। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন হাওড়ার এই মুখোপাধ্যায় লেনের বাড়িতেই। প্রথম জীবনে তিনি জীবিকার প্রয়োজনে কলকাতার শোভাবাজারের কাছে বেনিয়াটোলা স্ট্রীটের বাড়িতে চলে আসেন। প্রতিবছর রথের দিন এই বাড়ির কাঠামোপুজো হলেও সেবার পারিবারিক সূত্রে জানা গেল, উল্টোরথের দিন কাঠামোপুজো হবে। সেদিন থেকেই প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায়। পালবাড়ির ঠাকুরদালানে সাজসাজ রব ওঠে এই পুজোকে কেন্দ্র করে। এই বাড়ির দেবী ‘মা অভয়া’ নামে পরিচিত। অভয়া দশভুজা নন, এ বাড়িতে তিনি দ্বিভুজা। এক হাতে একটি প্রস্ফুটিত পদ্মফুল ও একটি ফল। অন্য হাতে যেন সকলকে অভয়দান করছেন তিনি। দেবী এখানে সিংহবাহিনী হলেও মহিষাসুর নেই। ডাকের সাজে সাজানো হয় এই পুজোর মূর্তিকে। কৃষ্ণানবমী তিথিতে বোধন বসে পালবাড়িতে, শুরু হয় চণ্ডীপাঠও। সপ্তমীতে বাড়িতেই নবপত্রিকার স্নান হয়। ছাগবলিও হয়, কিন্তু এই বাড়িতে অন্নভোগ হয় না। মহাষ্টমীতে মায়ের সামনে ‘ধুনো পোড়ানো’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিক্ষণে তান্ত্রিক মতে সন্ধিপুজো অনুষ্ঠিত হয়। জনশ্রুতি অনুযায়ী, অতীতে সন্ধিপুজোর আগে আন্দুল রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর অনতিদূরে কামান দাগানো হত। সেই কামানের শব্দ শুনেই পালবাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হত। এই সন্ধিক্ষণের পুজোতে পালবাড়িতে সম্পূর্ণ কালো রঙের একটি পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। বলিদানের পর সেই মাংস বাড়ির লোকেরা প্রসাদ হিসাবে দান করেন। মহানবমীতে ১টি পাঁঠা, ৫টি ফল এবং ১টি ছোট মহিষ বলিদান করা হয়। নবমীপুজো শেষ হয় হোম এবং যজ্ঞের মাধ্যমে। প্রায় ৩০০ বছরেরও প্রাচীন এই ‘অভয়া দুর্গাপুজো’ এভাবেই হয়ে আসছে শিবপুরের পালবাড়িতে।

ম্যাপ