Digital Durga
Digital Durga

সংরক্ষণ

রাজাহেঁসলা রাজবাড়ির পুজো পুরুলিয়া, পশ্চিমবঙ্গ

পুজোর ইতিহাস

পুরুলিয়ার ঝালদা থানার অধীন দুর্গম পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা রাজাহেঁসলা গ্রামে প্রায় ১২০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই দুর্গাপুজো। মোঘলদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সেসময়ে বেশিরভাগ হিন্দু রাজা আত্মগোপন করেছিলেন। নিজের প্রাণ ও মহিলাদের সম্ভ্রম বাঁচাতেই আত্মগোপনের পথ নিয়েছিলেন ছোট-বড় অনেক রাজাই, পাড়ি দিয়েছিলেন পশ্চিম ভারত থেকে পূর্ব ভারতের গভীর অরণ্যের আদিবাসী উপত্যকায়। রাজস্থানের বারাণসী থেকে এমনই এক হিন্দু রাজপুত রাজা এসেছিলেন পুরুলিয়ার ঝালদা থানার এই দুর্গম অঞ্চলে— চারদিকে উঁচু-নিচু পাহাড় ও গভীর জঙ্গলে ঘেরা হেঁসলা গ্রামে। তৎকালীন সেই রাজা ছিলেন দ্বিগ্বীজয়ী প্রতাপ সিংহ দেও। পাহাড়-জঙ্গল কেটে রাজপ্রাসাদ তৈরি করে তিনি ক্রমশ এলাকায় রাজত্ব বিস্তার করেন। স্থানীয় আদিবাসীরা রাজার সঙ্গে সংঘাতে পরাজিত হয়ে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নেয়। মোট ২৪টি মৌজার দখলদারি পেয়ে তিনি কাছারি, বাগানবাড়ি, নাটমহল, ঠাকুরদালান ও ১২টি সুবৃহৎ পুকুর তৈরি করেন। আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর আগে রাজার তৈরি ঐ ঠাকুরদালানে শক্তির দেবী হিসেবে মা দুর্গার পুজো শুরু হয়। প্রথমত, শক্তি রুপে দেবীর খড়গ পুজো শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে পুরুলিয়ার প্রাচীন সংস্কৃতি ছৌ নাচকে অনুসরণ করে দেবী দুর্গার মূর্তি পুজো শুরু হয়। রাজবাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি হেঁসলা নদী থেকে দেবী দুর্গার ঘট-বারি আনা হয়। ঘটা করে ঢাকবাদ্যের সঙ্গে বন্দুকের গুলি চালিয়ে রাজা ঐ নদীতে ডুব দিয়ে ঘট আনতেন। এখনও সেই প্রথা চালু আছে। তবে বন্দুকের গুলির বদলে শব্দবাজি ফাটানো হয়। পূর্বে মহাষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চলতো ছাগ ও মোষবলি। এখন আর তা হয় না। তবে দেবীদুর্গার পুজো সেই প্রাচীন বৈদিক রীতি মেনে বৈষ্ণব মতেই সম্পন্ন হয়। সেদিনের সেই রাজা কিংবা তাঁর রাজত্ব এখন আর কোনওটাই নেই। আছে শুধু রাজপ্রাসাদ, কাছারিবাড়ি, ঠাকুরদালান, নাটমহল এবং পুকুরগুলি। যদিও বাড়িগুলি বর্তমানে জরাজীর্ণ। রাজপরিবারের বর্তমান প্রজন্মের কেউই এখন এখানে থাকেন না। শুধু একজন কর্মচারী ভগ্নপ্রায় বাড়িগুলির দেখভাল করেন। বর্তমানে পুজোর সমস্ত আয়োজন করেন গ্রামবাসীরাই। পুজোর সময়ে আবার নতুন করে সেজে ওঠে এই রাজপ্রাসাদ। ভগ্নপ্রায় বাড়িটি যেন ফিরে পায় পুরোনো রাজঐতিহ্য। যদিও এখন এলাকায় আরও অনেক দুর্গাপুজোই হয়, তবুও এলাকার মানুষ ভিড় জমায় এই রাজবাড়িতে। প্রাচীন দুর্গাপুজো হিসেবে ভক্তরা পুজো দিতে আসেন এখানেই। রাজপরিবারের বর্তমান সদস্যরা দেশবিদেশের যে প্রান্তেই থাকুন, দুর্গাপুজোর সময়ে সকলেই এখানে এসে উপস্থিত হন। মহা- সমারোহ ও ধুমধাম করে চলে পুজো। এলাকার মানুষদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে পুজো উপভোগ করেন তাঁরা।