জলপাইগুড়ির বনেদি পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম নিয়োগী বাড়ির এই পুজো, যা ২০২১ সালে ২১৩ বছরে পদার্পণ করলো। নিয়োগীরা ছিলেন বাংলাদেশের পাটগ্রামের জমিদার। সেখানেই ১৮০৮ সালে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়েছিল। ১৯১২ সালে নিয়োগী পরিবারের কয়েকজন সদস্য কলকাতায় এসে বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৭ সালে পুজো চলে আসে জলপাইগুড়ির কামারপাড়ার বাড়িতে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিল এই পরিবার। নিমতিঝোড়া, দেবীঝোড়া, নেপুচাপুতে তাঁদের চা-বাগানের পাতা একসময় দেশ জুড়ে পরিচিত ছিল। নিয়োগীদের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল পুজোর পত্রিকা। পুজোর সূচনা থেকেই পারিবারিক পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি এতে লেখেন পরিবারের ঘনিষ্ঠরা। একসময়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়োগী পরিবারের পত্রিকায় শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে জানা যায়। পুজোর বোধন থেকে বিসর্জন পর্যন্ত মূল দায়িত্বে থাকেন মহিলারাই। আর পাঁচটা পরিবারের পুজোর প্রতিমার তুলনায় এই বাড়ির প্রতিমা একটু ভিন্ন ধরনের। অতসী ফুলের রঙে দেবীর রঙ। বাঁদিকে গণেশ, ডানদিকে থাকে কার্তিক। নবপত্রিকা অর্থাৎ কলাবৌ থাকে কার্তিকের পাশে। পুজোতে আজও বলিপ্রথা চালু রয়েছে এ বাড়িতে। পরিবারের সদস্যা শ্যামশ্রী নিয়োগীর কথায়, প্রাণীবলির পরিবর্তে এখন বলি দেওয়া হয় চালকুমড়ো। নবমীতে চালকুমড়োর উপর চালের গুঁড়ো দিয়ে শত্রুনির্মাণ করে সেই শত্রুকে বলি দেওয়া হয়। পুজোয় অন্নভোগের পাশাপাশি পায়েস, লুচি, মিষ্টি, দই প্রভৃতি নিবেদন করা হয় দেবীকে। অষ্টমীর রাতে দেবী দুর্গার পাশেই পূজিতা হন মা কালী। পুজোয় পরিবারের আত্মীয়দের পাশাপাশি অংশ নেন প্রতিবেশীরাও।