Digital Durga
Digital Durga

সংরক্ষণ

আন্দুল রাজবাড়ি হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ

পুজোর ইতিহাস

রাজবাড়ির সামনে এসে থামল সারি সারি জুড়িগাড়ি। পিছনে সুসজ্জিত ফিটন। জুড়িগাড়ি থেকে ডালার পর ডালা সন্দেশ নামছে। পিছনের ফিটন থেকে নামলেন এক গোরা সাহেব। হঠাৎ শোরগোল পড়ে গেল। এ যে স্বয়ং লর্ড ক্লাইভ সাহেব। পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজদৌল্লাকে হারিয়ে কোম্পানির নয়ণের মণি তখন। মহাসপ্তমীর সন্ধ্যে। সকালেই রাজবাড়ির কামানের গর্জনে শুরু হয়েছে দেবীর সপ্তমীবিহিত পুজো। হাওড়ার আন্দুল রাজবাড়িতে সেই প্রথম দুর্গাপুজো। রাজবাড়ির বৈভবের খামতি নেই। খামতি আড়ম্বরেরও। সেই জৌলুসের পারদ আরও চড়ে গেল ক্লাইভের পদার্পণে। নিছক গল্পকথা নয়, ঐতিহাসিক সত্য। ১৭৭০ সাল। আন্দুল-রাজ রামলোচন রায় সেবারই রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। ক্লাইভের দেওয়ান, পণ্ডিত মানুষ ছিলেন রামলোচন। আটটি মৌজায় বিস্তৃত তাঁর জমিদারি। ক্লাইভের সুপারিশে শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে পেয়েছেন 'রাজা' উপাধিও। সেই ক্লাইভের পরামর্শেই আন্দুল রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা। তাঁর অনুগত 'রাজা'কে উৎসাহ দিতে প্রথমবারের সেই পুজোয় উপস্থিত হয়েছিলেন লর্ড ক্লাইভ। সঙ্গে এনেছিলেন দশ হাজার টাকার সন্দেশ। দেবীর পাদপদ্মে নিবেদনের জন্য ১০৮টি পদ্ম ও এক হাজার টাকা প্রণামীও এনেছিলেন ওই ইংরেজ সাহেব। সেদিন রাজবাড়ির ইতিহাসে জন্ম নিয়েছিল নতুন এক ঐতিহ্যের। সে ঐতিহ্য আড়ম্বর-আভিজাত্যের। কামান গর্জন, তূর্যধ্বনি, আলোর রোশনাই, কাঙালি ভোজন, নাচমহলের বেলোয়ারি ঝাড়ের টুংটাং শব্দের সঙ্গে বাইজিদের মুজরো- সেই আভিজাত্যেরই স্মারক ছিল। বিষাণ বাজিয়ে, তূর্যধ্বনিতে মহাসমারোহের রাজবাড়ির শারদ-বন্দনায় একটি মহিষ, ১২টি ছাগ উৎসর্গ করা হয়েছিল সেবা। এখন আর সেই জৌলুস নেই। তা বলে ঐতিহ্য রক্ষায় খামতি নেই কোথাও। রাজবাড়ির বর্তমান সদস্য অরুণাভ মিত্র জানান, সরকারি নিষেধাজ্ঞায় কামান গর্জন ও বলি বন্ধ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পুজোর রীতি পূর্ববৎই বজায় আছে।